মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মেয়ে শামীমা বেগম বলেছেন, তার কৃতকর্মের জন্য বাকি জীবন তিনি গ্লানিবোধ করবেন। এখন তিনি সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্রিটিশ সরকারকে সহায়তা করতে চান। শামীমা বেগম বুধবার সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবির থেকে বিবিসি, বিবিসি ফাইভ লাইভ এবং আইটিভিকে পৃথক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। বিবিসির রিপোর্টার জশ বেকারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামীমা বলেন, আইএসে যোগ দেওয়ার কথা মনে পড়লে তিনি অসুস্থবোধ করেন, নিজের প্রতি ঘৃণাবোধ করেন। এখন তার প্রকৃত অনুভূতি প্রকাশ করতে পেরে তিনি স্বস্তিবোধ করছেন। তিনি বলেন, আমি আমার বাকি জীবন এ জন্য দুঃখবোধ করব। আপনি আমার মুখে তার ছাপ দেখতে পান বা না পান—
এটি আমাকে ভেতর থেকে মেরে ফেলছে। এ জন্য আমি ঘুমাতে পারি না। আইএস মানুষের জীবন নষ্ট করেছে, আমার ও আমার পরিবারের জীবন নষ্ট করেছে। আইএস তার খেলাফত কায়েম রাখতে পারেনি বলেই কি তিনি এখন তার মত পরিবর্তন করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে শামীমা বলেন, বহুদিন আগেই তার ধারণা পরিবর্তন হয়েছিল, তবে এখন তিনি তা প্রকাশ করতে পারার মতো মানসিক অবস্থায় পৌঁছেছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যমে শামীমা ব্রিটিশ জনগণ এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ব্রিটেনে ফেরার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
এই সাক্ষাৎকারে শামীমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ধরা যাক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ সাক্ষাৎকারের ভিডিও দেখছেন বা তার কথা পড়ছেন, তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে কী বলতে চান। জবাবে শামীমা বলেন, আমি বলতে চাই— আপনি সন্ত্রাসবাদ দমনে নিশ্চয়ই হিমশিম খাচ্ছেন। আমি এ নিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে আপনাকে বলতে পারব— এই জঙ্গিরা কীভাবে সিরিয়ার মতো জায়গায় লোকজনকে তাদের কথামতো কাজ করতে বাধ্য করে। আমি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপনার লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারব। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ সরকারের উচিৎ আমাকে হুমকি হিসেবে গণ্য না করে বরং সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা।
শামীমা পূর্ব লন্ডনের সেই তিন কিশোরীর একজন, যারা ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমান ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ার জন্য। তার জন্ম লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে। যখন তিনি লন্ডন ছেড়ে যান তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। তিনি তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার রাকায় পৌঁছান এবং সেখানে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া নেদারল্যান্ডসের এক যোদ্ধাকে বিয়ে করেন। এ ব্যক্তিই তার তিন সন্তানের পিতা।